ভিটামিন সি
সমার্থক শব্দ
ইংরেজি-vitamin C
সংজ্ঞা
ভিটামিন সি যার রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
( Ascorbic Acid)। এটি একটি জৈব অম্ল, যা শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়।
ইতিহাস
1928 সালে, Albert Szent-Gyorgyi অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে একটি পদার্থ বিচ্ছিন্ন করেন যাকে তিনি ‘হেক্সুরোনিক অ্যাসিড' বলে। চার বছর পর, চার্লস গ্লেন কিং তার গবেষণাগারে ভিটামিন সি বিচ্ছিন্ন করেন এবং সিদ্ধান্তে আসেন যে এটি ‘হেক্সুরোনিক অ্যাসিড'-এর মতোই। নরম্যান হাওয়ার্থ 1933 সালে ভিটামিন সি-এর রাসায়নিক গঠন নির্ণয় করেন।
নামকরণ
বিমূর্ত. হাঙ্গেরিয়ান জৈব রসায়নবিদ আলবার্ট সেজেন্ট-জিয়গি ভিটামিন সি এবং রুটিন (ভিটামিন পি৷ আবিষ্কার করেন। শরীরে এই ভিটামিনগুলির ভূমিকা এবং চর্মরোগবিদ্যায় তাদের প্রয়োগ বিশাল। ভিটামিন সি আবিষ্কার এবং অক্সিডেশনের বর্ণনার জন্য, অ্যালবার্ট সেজেন্ট-জিয়র্গি 1937 সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ভিটামিন সি হল একটি জলে দ্রবণীয় ভিটামিন যা সাইট্রাস এবং অন্যান্য ফল এবং সবজিতে পাওয়া যায় এবং এটি একটি খাদ্যতালিকাগত পরিপূরক হিসাবেও বিক্রি হয়।
বৈশিষ্ট্য
ভিটামিন-সি' দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মত কাজ করে। এসব ভিটামারের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডসহ এর বিভিন্ন লবণ ও ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডের (dehydroascorbic acid) মত কিছু জারিত (oxidized) যৌগ বিদ্যমান। অ্যাসকরবেট বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, এ দুয়ের যেকোন একটি দেহে প্রবেশ করলে প্রাকৃতিকভাবে দুটি পদার্থই প্রস্তুত হয়। এর কারণ, এরা plt এর মানের তারতম্যের সাথে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এটি কমপক্ষে আট রকমের উৎসেচক সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি বিভিন্ন কোলাজেন সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেগুলোর অভাবে স্কার্ভি রোগের উপসর্গসমূহ দেখা দেয়। প্রাণীদের দেহে এই বিক্রিয়াসমূহ প্রধাণত ক্ষত-পূরণে ও কৈশিক রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। অ্যাসকরবেট জারণজনিত পীড়ন (oxidative stress) রোধে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণ
লেবু, কমলা,আমলকি ইত্যাদি।
অনন্য বৈশিষ্ট্য
যার রাসায়নিক সংকেত Cg#g°g এটি সাদা দানাদার পদার্থ ।
উপকারিতা অপকারিতা:
বিউটি ম্যাগাজিন, ডায়াটেশিয়ান এবং ডাক্তাররা বিভিন্ন সময়ে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি-র প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বলেছে। ভিটামিন-সি একাধারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে চুল, ত্বক, হাড় এবং দাঁতকে সুস্থ-সবল রাখে এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার হাত থেকেও রক্ষা করে। আপনি যখনই ভিটামিন-সি শব্দটা শোনেন, তখন প্রথমেই লেবু, কমলালেবু, তরমুজ, স্ট্রবেরি এবং আনারসের মতন সাইট্রাস ফলের কথা মাথায় আসলেও অন্যান্য অনেক খাবার আছে যার মধ্যে অধিক পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। এখানে কয়েকটার তালিকা দেওয়া হল।পেঁপে এবং টম্যাটোপেঁপে একাধারে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-এ সহ ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। এর মধ্যে বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি কম পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। স্যালাডের সাথে দিয়ে অথবা জুস হিসেবে খেলেও সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।উজ্জ্বল লাল টম্যাটোর মধ্যে বেশী মাত্রায় ভিটামিন-সি থাকে। সান-ফ্রায়েড টম্যাটো খেতে পারেন কিংবা স্যালাডর মধ্যেও দিতে পারেন। একটা টম্যাটো রোজকার ভিটামিন সি-র চাহিদা পূরণ করে।কিউই এবং চেরিকিউই-র টুকরোর মধ্যে ভরপুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, ই এবং কে-র সাথে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে। ফাইবার বেশী থাকার পাশাপাশি কম ক্যালোরি থাকে বলে চাপ-ধকলের মোকাবিলা করতে সাহায্য করার পাশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং ওজন এবং রক্তচাপ কমায়।চেরিতে ভরপুর ভিটামিন সি থাকে, যা সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এই ছোট্ট কিন্তু সুন্দর লাল ফলের অসাধারণ স্বাদ এবং এটা সরাসরি কিংবা স্মুথির সাথেও খাওয়া যায়।বেল পিপার এবং ব্রকোলিবেলপিপার ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হবার পাশাপাশি অন্যান্য ভিটামিন এবং ফাইবার ও ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ। স্যালাড, স্যুপ এবং ডিসের সাথে খেয়ে দুশ্চিন্তা এবং পেট ফোলা কমাতে পারেন এবং একই সাথে উন্নত মেটাবোলিজম ও দৃষ্টিশক্তি পেতে পারেন।ভিটামিন সি-র অন্য একটা প্রাকৃতিক উৎস হল ব্রকোলি। ব্রকোলির মধ্যে ভিটামিন-এ ও গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল থাকে। স্যালাড, ঝোল এবং স্যুপের সাথে খেতে পারেন এবং এর ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমার সাথে সাথে রক্তচাপ কমে এবং ওজন কমাতে ও হৃৎপিণ্ড ও চোখের স্বাস্থ্যর উন্নতি ঘটায়।পেয়ারা এবং আমলাপেয়ারা একাধারে ভিটামিন-সি, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা সরাসরি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি হয় এবং রোগের হাত থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়।আমলা হল বিদেশী ফল যা তুলে, শুকিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ব্যবহার করা হয়। আমলার মধ্যের ভিটামিন সি-র ঘনত্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে রোগের মোকাবিলা করে।পাতাকপি এবং ফুলকপিপাতা কপি একইসাথে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড, জিযাক্সাআনথিন, লুটেনিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটা চমৎকার খাবার। ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর সাথে উন্নত চোখ এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য এবং হাঁপানির চিকিৎসা ও ডিটক্সিফাই করার জন্য এটাকে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।ফুলকপিতে ভিটামিন সি, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল থাকে এবং একই সাথে কম ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট ও ক্যারোটিনয়েড থাকে। এটাকে রোস্ট করে, ভেজে অথবা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়।
ব্যবহার
1, ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়।তারা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শরীরে অবসন্ন হয়ে পড়েন।
2. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হয়, তাদের হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে।
3. ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়াও ভিটামিন-সি-এর ঘাটতির লক্ষণ।
4.ভিটামিন-সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এর ঘাটতি দেখা দিলে এসব অংশে সমস্যা হতে পারে।
5. ভিটামিন-সি-এর অভাব হলে গিঁটে ব্যথা বা পেশিতে ব্যথার সমস্যা হয়।
6. ভিটামিন-সি-এর অভাব হলে দেহে কালশিটে দাগ পরে
7.স্কার্ভি হল ভিটামিন সি এর অভাবজনিত একটি রোগ
Related post:
_________
0 Comments