সিফিলিস রোগ কি?

 সিফিলিস (Syphilis)


জীবাণু


Treponema pallidum নামক ব্যাকটেরিয়ামের সংক্রমণে সৃষ্ট যৌনবাহিত রোগকে সিফিলিস বলে। বাংলায় ( ফিরিঙ্গি রোগ বা গর্মি রোগ ) স্পিরোসেত ব্যাকটেরিয়া ট্রেপোনেমা পেলিডাম উপজাত পেলিডাম দ্বারা সৃষ্ট একটি যৌনবাহিত রোগ। সংক্রমণের প্রাথমিক পথ যৌন সংস্পর্শ;তাছাড়াও রক্ত পরিসঞ্চালন, চুম্বন,চামড়ার আঘাতপ্রাপ্তি এবং গর্ভাবস্থায় বা জন্মের সময় মায়ের কাছ থেকে ভ্রূণে সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগে দেহে জটিলতা দেখা দেয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।


সংক্রমণ প্রক্রিয়া (Mode of Transmission):

সিফিলিস আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সৃষ্ট সিফিলিটিক ক্ষত (syphilitic sore)-এর সরাসরি সংস্পর্শে এলে জনান্তরে রোগে ছড়িয়ে পড়ে। সিফিলিটিক ক্ষত প্রধানত বহিযৌনাঙ্গ, যোানি, পায়ু বা মলাশয়ে অবস্থান করে, কিছু দেখা যায় ঠোট ও মুখে। যৌনমিলনের ধরনের উপর (যোনি, পায়ু, মুখ) সংক্রমণের উৎস নির্ডের করে। সিফিলিসে আত্রান্ত গর্ভবর্তী নারী সন্তান ভূমিষ্ঠর আগেই তার শরীরে সিফিলিস রোগের বিস্তার ঘটিয়ে দেয়। সিফিলিসের জীবাণুতে সংক্রমিত হলে সাধারণত ২১ দিনের মাথায় রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, তবে ব্যক্তি বিশেষে সময়কাল ১০-৯০ দিন হতে পারে ।

সিফিলিস রোগ


লক্ষণ (Symptoms):

সিফিলিসের প্রথম লক্ষণ যেমন বেশ দেরিতে (অর্থাৎ ২১ দিন পর) প্রকাশ পায় তেমনি শেষ পর্যায়ে যেতেও অনেক সপ্তাহ, মাস বা বছর পেরিয়ে যায়। লক্ষণ প্রকাশের সময়কালকে ৪টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।

১. প্রাথমিক পর্যায় (Primary stage) : ২১ দিন পর ১টি মাত্র সিফিলিটিক ক্ষত প্রকাশিত হয়। এটি দূঢ়, গোল ও ব্যাথাহীন ক্ষত । এটি দেখে বোঝা যায় জীবাণ কোন পথে সংক্রমিত হয়েছে। তিন থেকে ছয় সপ্তাহ পর ক্ষতপূরণ হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ধাবিত হয়।

২. মাধ্যমিক পর্যায় (১eeondary stage) : গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি (rash) দেখা দেয়া এবং সিফিলিটিক ক্ষত অমসৃণ, লাল বা লালচে বাদামী দাগ হিসেবে হাত-পায়ের তালুতে আবির্ভূত হওয়া এ পর্যায়ের লক্ষণ।স্ফীত লাসকা গ্রাস্থি, গলাভাঙ্গা, বিভিন্ন জায়গায় চল উঠে যাওয়া, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, পেশিবেথা, ক্লান্তি প্রভিতী এ পর্যায়ে দেখা দেয়।

৩. সুণ্ত পর্যায় (Latent stage) : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলা অদশ্য হলে শুরু হয় সুপ্ত পযায়। এ সময় আক্রান্তের দেহে কোনো ক্ষত, ফসকড়ি বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায় না। বছরের পর বছর এ পর্যায় অব্যাহত থাকতে পারে ।

৪. বিলম্বিত পর্যায় (Late stage or Tertiary stage) : যদি সিফিলিস আক্রান্ত রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা না নেন তবে তার ক্ষেত্রে Tertiary syphilis হতে পারে । আক্রান্ত হওয়ার ১০ থেকে ৩০ বছর পর ও এইটা হতে পারে। রোগের বিলম্বিত দশায় রোগীর মস্তিষ্ক, স্লায়ু, চোখ, হৃতপিন্ড, রক্তকণিকা, যকৃত, গ্রস্থি ও সন্ধির ক্ষতি সাধন করে। ফলে পেশি সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে, দেখা দেয় পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব, হতবুদ্ধি ও অস্থিরচিত্ত। এ অবস্থায় মানুষের মৃত্যু ঘটে।

সিফিলিস রোগ


প্রতিকার (Remedy):

প্রতিরোধ : সিফিলিসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থায়ী সঙ্গীর সঙ্গে জীবনযাপন করা, ভিন্ন সঙ্গীর কথা চিন্তাই করা উচিত নয়। কিংবা কোথাও সিফিলিস রোগী আছে এমন ঘরে যাওয়া-আসা করাও নিরাপদ নয়। তা ছাড়া, অ্যালকোহল ও মাদক জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকা একান্ত বাঞ্চনীয়, কারণ এসব পান বা সেবন যৌন আচরণকে উসকে দেয়, তখন সঙ্গী নির্বাচন সঠিক নাও হতে পারে।

ডাক্তারের শরণাপন্ন হন
ডাক্তারের শরণাপন্ন হন


চিকিৎ্সা :

 সিফিলিসের লক্ষণ জানা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে সহজেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় । কারও দেহে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায় বা প্রাক-সুপ্ত পর্যায়ের সিফিলিস জীবানু থাকলে তাকে একটি মাত্র Benzathine Penicillin-G । ইনজেকশন দিলেই রোগ দূর হতে পারে। সুপ্ত পর্যায়ের শেষ অবস্থায় থাকলে তাকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ইনজেকশন দিতে হয়। চিকিৎ্সার ফলে সিফিলিস সারবে কিন্তু দেহের ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুর ক্ষত পূরণ হবে না। সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে নিজেকে বা অন্যকে বিরত রাখতে হবে।


Post a Comment

0 Comments