AIDS: Acquired Immune Deficiency Syndrome
AIDS হলো Acquired (অর্জিত) Immune (ইমিউন বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) Deficieney (ডেফিসিয়েন্সি বা
হ্রাস) Syndrome (সিনড্রোম বা অবস্থা) এর সংক্ষিপ্ত রূপ । অর্থাৎ, বিশেষ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াকে এইডস (AIDS) বলে। Human Immunodeficiency Virus, সংক্ষেপে HIV নামক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। HIV ভাইরাসের আক্রমণে মানুষের শ্বেত রক্তকণিকার ম্যাক্রোফেজ ও T, লিক্ফোসাইট ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যায় । বর্তমান
বিশ্বে AIDS একটি মারাত্মক রোগ। ২০০০ সালে বিশ্ব HIV আক্রান্ত মমানুষে সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ। এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ৩০ লক্ষ। আফ্রিকান দেশসমূহে HTV-র আক্রমণ বেশি লক্ষ করা যায়।
ধারণা করা হয় বানরের দেহে এই ভাইরাসটি ছিল যা সর্বপ্রথম আফ্রিকায় বানর থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হয় এবং পরে তা আমেরিকা, ইউরোপ তথা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সালে ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী Dr. Lue Montagnier এবং Dr. Robert Gallo 1984 সালে পৃথকভাবে AIDS এর জীবাণু আবিস্কার করেন। ভয়াবহতার নিরিখে এইডস সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO) ১লা ডিসেম্বরকে বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে এক লুপ বিশিষ্ট লাল ফিতাকে বিশ্বজড়ে এইডস-এর প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
AIDS এর বিস্তার (Spread of AIDS)
বিভিন্ন উপয়ে এইডসের ভাইরাস একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন- নারী-পুরুষের অস্বাভাবিক ও অসামাজিক যৌন আচরণ, সংক্রমিত সিরিঞ্জ ব্যবহার, সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ, সংত্রমিত মায়ের গর্ভে জন্গ্রহণকারী শিশু, সেলুনে একই ব্লেড বা ক্ষুর বিভিন্ন জনে ব্যবহার করা, দন্ত চিকিৎসা ও শল্য চিকিত্সা গ্রহণকারী ইত্যাদি।
রোগের লক্ষণ:
এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত রােগীর শ্বেতরক্তকণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ফল রোগীর ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকে এবং নিচে বর্ণিত লক্ষণগুলা প্রকাশ পতে থাকে-
1.প্রাথমিক অবস্থায় দেহে জর আসে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বর দীর্ঘায়িত হয়; (ii) দেহের বিভিন্ন গ্রস্থি ফুলে যায় এবং শরীর শুকিয়ে যায় ও ওজন কমতেত থাকে; (ii) পেটে ব্যথা হয় এবং খাবারে অনীহা সৃষ্টি হয়; (iv) ফুসফুসে জীবাণুর
আক্রমণ ঘটে এবং বুকে ব্যথাসহ শুষ্ক কফ জমে; (v)অস্থিসন্ধিসমূহে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং দেহে জালাপোড়া হয়;(vi) শ্বাসকষ্ট, জিহ্বায় সাদা স্তর জমা, তকের মিউকাস ঝিল্লি বা যে কোনো ছিদ্র থেকে রক্তপাত, ঘন ঘন ফুসকুড়ি, সার্বক্ষণিক মাথা ব্যাথা এবং ক্রমশঃ স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়; (vi) সংক্রমণের চুড়ান্ত পর্যায়ে রোগী যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অন্ধত্ব প্রভিতি একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে পরিশেষে মৃত্যবরণ করে ।
এইডস-এর লক্ষণ নারী-পুরুষে প্রায় এক রকম হলেও নারীদেহে কতকগুলো বিশেষ লক্ষণ দেখা যায় । যেমন-যোনিতে দীর্স্থায়ী বা অনিরাময়যোগ্য ঈস্টের সংক্রমণ । এ সংক্রমণ সুস্থ নারীদেহে দ্রুত সেরে যায় ।জরায়ু গাত্রে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)-এর আক্রমণে টিউমার হওয়া এবং পরবর্তীতে সার্ভিক্স ক্যান্সারে রূপ নেয়া আরেকটি লক্ষণ।
রোগ নির্ণয় :
রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে দেহে HIV সংক্রমণ নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে রক্তের যেসব পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হলো- HIV অ্যান্টিবডি টেস্ট, RNA টেস্ট, p24 protein টেস্ট, ওয়েস্টার্ণ ব্লুট (Western blot) টেস্ট ইত্যাদি। এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্তে T-helper cels বা CD4 cell গণনা করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। রক্তে যদি CD4 Cell এর পরিমাণ সবাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম থাকে তাহলে বুঝা যায় HIV অনাত্রম্যতন্ত্রকে ধ্বংস করছে (রক্তের সাভাবিক CD4 cell er পরিমাণ 500 – 1,500 cells/mm’ )
প্রতিকার :
প্রতিরোধ : এইডস প্রতিরোধে নিচে বর্ণিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত
নিরাপদ যৌন সঙ্গম করা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি মেনে চলা। (ii) অনিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা; (iii) যৌন মিলনে কনডমের ব্যবহার এবং এইডস থেকে রক্ষায় এর ভূমিকা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা; (iv) এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা, বিলবোর্ড, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা; (v) ইনজেকশন গ্রহণের সময় ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পনরায় ব্যবহার না করা এবং শিরার মাধ্যমে কোন ড্রাগ গ্রহণ না করা; (vi) সেলুনে একটি ব্লেড একবারই ব্যবহার করা; (vii) সংক্রমিত ব্যক্তিকে চিহ্রিত করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রেখে চিকিৎসা প্রদান করা; (vi) পতিতাদের নিরাপদ যৌনতা সম্পর্কে সচেতন করা; (ix) প্রতিবার মিলনকালে কনডম ব্যবহার করা প্রভূতি ।
চিকিৎসা :
এইডস রোগ নিরাময়ের সফল কোনো ওষুধ বা প্রতিরোধের কোনো ভ্যাকসিন আজও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে এর সংক্রমণ বিলম্বিত করতে এবং তীব্রতা কমাতে চিকিৎসকগন কিছু ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে এন্টিরেট্রোভাইরাস থেরাপি (Antiretroviral therapay, ART)- দ্বারা এইডস রাগের চিকিৎসা করা হয়। এ চিকিৎসায় তিন প্রকার ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যথা- ১. নিউক্লিওসাইড রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ ইনহিবিটর (NRT) গ্রপের ঔষধ, যেমন- Zidovudine, Azidothymidine ইত্যাদি; ২. নন-নিউক্লিওসাইড রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ ইনহিবিটর (NNRTI) গ্রুপের ওষুধ, যেমন- Delviridine, Nevirapine ইত্যাদি এবং ৩. প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর (PI ) গ্রুপের ওষুধ,যেমন- Indinavir Ritonavir
এইডস চিকিতসায় এক প্রকার ওষুধ কম কার্যকর, তাই সম্মিলিতভাবে ঔষধ দেয়া হয়।
-02.jpeg)
-01.jpeg)
0 Comments