সাইনুসাইটিস (Sinusitis)
মাথার খুলিতে মুখমন্ডলীয় অংশে নাসাগহ্বরের দুপাশে অবস্থিত বায়ুপূর্ণ চারজোড়া বিশেষ গব্বরকে সাইনাস বা পারানাসাল সাইনাস বলে । এগুলো হলো-
১. ম্যাক্সিলারি সাইনাস (Maxillary sinus) : ম্যাক্সিলারি অঞ্চলে গালে অবস্থিত ।
২. ফ্রুন্টাল সাইনাস (Frontal sinus) : চোখের উপরে অবস্থিত।
৩. এথময়েড সাইনাস (Ethmoid sinus) : দু’চোখের মাঝখানে অবস্থিত।
৪. স্ফেনয়েড সাইনাস (Sphenoid sinus) :এথময়েড সাইনাসের পেছনে অবস্থিত।
সাইনাস সাধারণত বায়ুপূর্ণ মিউকাস পর্দায় আবৃত এবং ক্ষুদ্র নালির মাধ্যমে নাসাগহ্বর তথা শ্বাসনালির সাথে যুক্ত থাকে। এসব সাইনাস যদি বাতাসের বদলে তরল পদার্থে পূর্ণ থাকে এবং এই তরল যদি ভাইরাস, এবং এই তরল যদি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাকে সংক্রমিত হয় তখন সাইনাসের হয় তখন সাইনাসের মিউকাস পর্দায় প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের সংক্রমণে বা এলার্জিজনিত কারণে সাইনাসের মিউকাস পর্দায় যে প্রদাহের সৃষ্টি হয় তাকেই সায়ানুসাইটিস বলে ।
সাইনুসাইটিসের কারণে মাথাব্যথা, মুখমন্ডলে ব্যথা, নাক দিয়ে ঘন হলদে বা সবুজাভ তরল ঝরে পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে সাইনুসাইটিস দুরকম :-
১. একিউট সায়ানাসাইটিস (Acute sinusitis) : এর স্থায়িত্ব ৪-৮ মাস ।
২. ক্রনিক সাইনুসাইটিস(Chronic sinusitis) : এর স্থায়িত্ব ২ মাসের বেশি সময় ।
রোগের কারণ :
১. সাইনাসগুলা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস (Human respiratory syncytial virus, Parainflueza virus, Metapneumo virus) বাক্টেরিয়া (Streptococcus pneumoniae, Haemophilus infuenzae) এবং কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাকে আক্রান্ত হলে সাইনুসাইটিস হতে পারে।
২. ঠাণ্ডাজনিত কারণে: এলার্জিজনিত কারণ ব্যবধায়ক পর্দার অস্বাভাবিকতায় সাইনাস গহ্বর অবরুদ্ধ হয়ে নাকে পলিপ সৃষ্টি হলে; নাসাগহ্বরের মিউকোসা স্ফীতির ফলে নাসাপথ সরু হয়ে ক্রনিক সাইনুসাইটিস হতে পারে।
৩. দাতের ইনফেকশন থেকে বা দাঁত তুলতে গিয়েও সাইনাসে সংক্রমণ হতে পারে।
৪. য়ারা হাপানির সমস্যায় ভোগে তাদের দীর্ঘস্থায়ী সাইনুসাইটিস দেখা যায় ।
৫. সাধারণত ঘরের পোকামাকড়, ধুলাবালি, পেস্ট তেলাপোকা ইত্যাদি যেসব এলার্জেন ধারণ করে তার প্রভাবে সায়ানুসাইটিস হতে পারে ।
৬. ইউস্টেশিয়ান নালির (eustachian tube) সামান্য অস্তাভাবিকতায় সাইনাস গহ্বর অবরুদ্ধ হয়ে এবং সংক্রমণের ফলে সাইনুসাইটিস হতে পারে।
৭. নাকের হাড় বাঁকা থাকলে অথবা মুখগহ্বরের টনসিল বড় হলে এ রোগ হতে পারে ।
৮.সিস্টিক ফাইব্রোসিস এর কারণে এই রোগ হয় ।
৯. অপুষ্টি প্ররিবেশ দূষণ ও ঠান্ডা স্যাতরসেঁতে পরিবেশের কারণেও এ রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষণ :
১. নাক থেকে হলদে বা সবুজ বর্ণের ঘন তরল বের হয়। এতে পুজ বা রক্ত থাকত পারে।
২, দীর্ঘ ও বিরক্তিকর তীব মাথা ব্যথা লেগেই থাকে যা সাইনাসের বিভিন্ন অঞ্চলে হতে পারে ।
৩. মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরোে বেড়ে যায়।
৪. জ্বর জুবর ভাব থাকে, কোন কিছু ভালো লাগে না বরং অল্পতেই ক্লান্ত লাগে।
৫. নাক বন্ধ থাকে নিঃশ্বাসের সময় নাক দিয়ে বাজে গন্ধ বর হয় ।
৬. মুখমন্ডল অনুভূতিইীন মনে হয়।
৭. মাথাব্যথার সাথে দাঁত ব্যথাও হতে পারে। কাশি হয়, রাতে কাশির তীবতা বাড়ে, গলা ভেঙ্গে যায়।
জটিলতা :
সাইনুসাইটিস সংক্রান্ত জটিলতা কেবল নাসিকাগহ্বর ঘিরেই অবস্থান করে না, বরং সাইনাসগুলোর অবস্থান চোখ ও মস্তিষ্কের মতো অত্যান্ত সংবদনশীল অঙ্গের সংলগ্ন হওয়ায় জাবাণুর সংত্রমণ শুধু সাইনাসেই সীমাবদ্ধ না থেকে রক্তবহিকা হয়ে চোখ ও মস্তিস্কে পৌছালে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে সংক্রমণের ফলে মাথাব্যথা, দষ্টিহীনতা থেকে শুরু করে মুত্য পর্যন্ত হতে পারে। চোথে সংক্রমণের ফলে পেরঅরাবটাল ও অরবিটাল সেলুলাইটিসসহ আরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে ।
প্রতিকার :
স্বেচছাসতর্কতা : সাইনাসে জমাট বেধে থাকা তরলকে বিগলিত করে সাইনাসকে চাপমুক্ত ও স্বাভাবিক রাখতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
(১) গরম পানিতে ভিজিয়ে, চিপডে একখন্ড কাপড় প্রতিদিন বারবার মুখমন্ডলে চেপে ধরা ।
(২) মিউকাস তরল করতে প্রচুর পানি পান করা (৩) প্রতিদিন ২-৪ বার নাক দিয়ে বাষ্প টেনে নেওয়া
(৪) দিনে কয়েকবার ন্যাসাল স্যালাইন স্প্রে করা
(৫) আর্দ্রতা প্রতিরোধক ব্যবহার করা
(৬) যন্ত্রের সাহায্য নাকের ভিতর সবেগে পানি প্রবাহিত করে সাইনাস পরিষ্কার রাখা
(৭) বন্ধ নাক খোলার জন্য ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহারে সতর্ক থাকাপ [দিকে ভালো কাজ করলেও ৩-৫ দিন একনাগাড়ে ব্যবহার করলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে] ।
(৮) নাক বন্ধ অবস্থায় উড়োজাহজে না চড়াই ভালো এবং
(৯) মাথা নিচু করে শরীর বাঁকানোই অনুচিত ।
ওষুধ প্রয়োগ : অ্যাকিউট সাইনুসাইটিসের চিকিৎ্সায় ওষুধের দরকার হয় না। তবে প্রয়োজনে দুসপ্তাহের চিকিৎসা চলতে পারে। ক্রনিক সাইনুসাইটিসের চিকিৎসা চলে ৩-৪ সপ্তাহ। ছত্রাকজনিত সাইনুসাইটসের চিকিৎসায় বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয় । অ্যান্টিবায়াোটিকসহ সমস্ত ঔষধ ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হতে হবে।
কোনো শিশু যদি নাক দিয়ে তরল-নির্গমনসহ ২-৩ সপ্তাহ ধরে কাশিতে, ১০২.২° এ জরে, মাথাব্যথা ও প্রচন্ড চোখফোলা অসুখে ভোগে তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের নির্দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ শুরু করতে হবে।
_______________
0 Comments